শহরের সড়কবাজার কলেজ রোডের প্রবেশ মুখে যেতেই কানে ভেসে আসে হাতুড়ি দিয়ে লোহা পেটানোর টুং টাং শব্দ। একজন লাল দগদগে লোহার খন্ড ধরে আছেন আরেকজন সজোড়ে হাতুড়ি দিয়ে পিটিয়ে দা, বঁটি, ছুরিতে রূপ দিচ্ছেন। আবার কেউ শান দিচ্ছে বঁটি কিংবা চাপাতিতে। কেউবা আবার কয়লার আগুনে দিচ্ছে বাতাস।কোরবানির পশু জবাই ও মাংস প্রস্তুতের জন্য দা, বঁটি, ছুরিসহ প্রয়োজনীয় সব উপকরণ তৈরিতে দিনরাত কাজ করছেন কামার শিল্পীরা। আসন্ন কোরবানি ঈদের বাকি আর মাত্র চারদিন।
আসন্ন ঈদুল আযহাকে সামনে রেখে হাতুড়ির টুং টাং শব্দে মুখরিত হয়ে উঠেছে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আখাউড়া পৌরশহরের কামারশালাগুলো।বর্তমানে কামার শিল্পের সঙ্গে জড়িত মালিক ও শ্রমিকরা কোরবানী পশু জবাই করার সরঞ্জাম তৈরিতে ব্যস্ত সময় পার করছেন।পৌরশহরের সড়কবাজার, লালবাজার, বড়বাজার, খরমপুর এলাকাসহ বিভিন্ন এলাকায় কম কওে হলেও ১৫ টি কামারশালা রয়েছে।
শহরের সড়কবাজারের কামার শিল্পী অমূল্য কর্মকার বলেন, সারাবছর এসব সরঞ্জাম তৈরির তেমন কাজ থাকে না। কোরবানির ঈদ আসলে কাজের চাপ একটু বাড়ে। আগে যেমন খেতে খামারে কাজ হতো সেখানে লাঙ্গলের ফলা, টনা কাঁচি, নিড়ানি কাঁচি সহ বিভিন্ন লোহার সরঞ্জাম ব্যবহার করতো। এখন আর আগের মতো তেমন কৃষি কাজ নেই। তাই এখন আর আমারদের কাছে এসব সরঞ্জাম তৈরি ও শান দিতে কেউ ছুটে আসে না। প্রতিবছর কোরবানি ঈদের সময় ঘনিয়ে এলে দু’চার টা পয়সার মুখ দেখি।
একই বাজারের কামার শিল্পী কাজল কর্মককার বলেন, বাপ-দাদার পেশা হিসাবে লোহা পেটানোর কাজ শিখেছি। বর্তমানে এ কাজ খুবই কমে গেছে। বাবা, দাদারা এ কাজ শিখিয়ে গেছেন তাই এ পেশা ধরে রেখেছি।
উত্তম দেব নামের আরেক কামার শিল্পী জানান, কয়লার সংকট দেখা দিয়েছে। এর সাথে বেড়েছে দা, বঁটি বানানোর লোহা ও ইস্পাতের দাম। ফলে এখন আর কাজ করে আগের মতো লাভ হয় না। এ পেশায় যারা জড়িত তাদেও কপালে চিন্তার ভাজ পড়েছে।
উপজেলার নয়াদিল গ্রামের আনিসুর রহমান নামের এক ক্রেতা জানান, এ বছর দা, বঁটি চাকুর দাম অনেক বেশি। ইতিমধ্যেই কোরবানির পশু কিনেছি। তাই দাম বেশি হলেও সরঞ্জাম কিনতে হবে।
পৌরশহরের সড়কবাজার ব্যবসায়ি পরিচালনা কমিটির ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক বাবুল পারভেজ বলেন, এক সময় শহরের কামারশালা গুলোতে মালিক-শ্রমিকদের কর্ম ব্যস্ততায় মুখরিত থাকতো। এখন আর সেই চিত্র দেখা যায় না। ভবিষৎ নেই জেনে অনেকেই বাপ-দাদার পেশা ছেড়ে অন্য পেশায় চলে গেছে। সরকারি পৃষ্টপোষকতা দিয়ে এ শিল্পকে টিকিয়ে রাখা উচিৎ বলে মনে করেন এ ব্যবসায়ি নেতা।