পানি সম্পদ প্রতিমন্ত্রী জাহিদ ফারুক বলেছেন; হাওরের গুরুত্বপূর্ণ কাজ শুষ্ক মৌসুমে সম্পাদন করতে হবে। ভারতের মেঘালয় ও বরাক বেসিনে একই সময় বৃষ্টিপাত হলে সেই পানির চাপে এই অঞ্চল ক্ষতিগ্রস্থ হয়। তাই প্রয়োজনীতার নিরিখে শাখা নদী ড্রেজিং করে নাব্যতা বৃদ্ধি করে বর্ষায় এর পানি ধারণ ক্ষমতা বৃদ্ধি করতে হবে। পানির রিজার্ভার সৃষ্টি করতে হবে। যাতে করে শুষ্ক মৌসুমে চাষাবাদ ব্যবহার করা যায়।
আজ সুনামগঞ্জ জেলার ছাতক, ধর্মপাশা ও জামালগঞ্জ উপজেলার সংশোধিত কাবিটা নীতিমালা-২০১৭ এর আওতায় বিভিন্ন হাওরে চলমান ডুবন্ত বাঁধের মেরামত/পুন:নির্মান কাজ পরিদর্শন করেন কালে তিনি এসব কথা বলেন।
এর আগে ছাতক উপজেলার গোবিন্দগঞ্জের বটেরখাল এর
ডান তীরের ভাঙ্গন পরিদর্শন করেন। এঅংশে ড্রেজিং ও প্রতিরক্ষা কাজের প্রকল্প প্রণয়নের নির্দেশ দেন। এসময় স্থানীয় সংসদ সদস্য মহিবুর রহমান মানিক উপস্থিত ছিলেন।
প্রতিমন্ত্রী জাহিদ বলেন, বন্যায় ধীরে ধীরে পলি পড়ে নদীর ও হাওরের তলদেশ উঁচু হওয়ায় পানি নদী দিয়ে প্রবাহিত হয়ে সহসা সাগরে চলে যেতে পারে না এবং হাওরে পর্যাপ্ত পানি রিজার্ভ থাকছে না । হাওর বাঁচাতে হলে নদী খনন করতে হবে। নদীগুলো খনন করে নাব্যতা ফিরিয়ে না আনলে শুধু বাঁধ দিয়ে হাওরের ফসল রক্ষা করা দুরুহ হয়ে যাবে। হাওর খনন করে পানির রিজার্ভার সৃষ্টি করতে হবে। শুধু প্রাকৃতিক কারণ নয় মানবসৃষ্ট কারণেও হাওরবাসীকে দুর্ভোগ পোহাতে হয়।
প্রতিমন্ত্রী আরও বলেন, বঙ্গবন্ধু কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গরিব দু:খি মানুষের কষ্ট লাঘব করে তাদের মুখে হাসি ফুটাতে চান।তিনি হাওরবাসির জন্য সবই করবেন। তার দূরদৃষ্টিতায় ২০১৭ সালের পর হতে আকস্মিক বন্যায় হাওরের ক্ষতির পরিমান হ্রাস পাচ্ছে। তিনি হাওরবাসির কল্যানে এই অঞ্চলে মেগা প্রকল্প গ্রহণ করেছেন। জেলার ১৪ টি খাল পুন:খনন করা হবে।
সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন আমরা প্রায়ই হাওরের প্রকল্প পরিদর্শনে আসি। পরিদর্শনে আসলে কাজের মান ভালো হয়।
উপস্থিত স্থানীয়দের দাবির প্রেক্ষিতে প্রতীমন্ত্রী বলেন পলি বন্ধকরা সম্ভব না। তবে নদী দখলমুক্ত ও অবৈধ্য বালু উত্তোলন অবশ্যই বন্ধ করতে হবে। এ ব্যাপারে মিডিয়ার ভুমিকার কথা উল্লেখ করেন। এলাকাবাসী আপনাদেরও সচেতন হতে হবে। সবার সম্মিত প্রচেষ্টায় হাওর হবে শষ্য ভান্ডার। এলাকার মানুষের জীবন মানের ব্যাপক উন্নয়ন হবে।
উল্লেখ্য দেশের উত্তর-পূর্বাঞ্চলে মোট ৩৫১টি হাওর রয়েছে। এই হাওর অঞ্চলগুলো বন্যা প্রবণ নিম্নাঞ্চল। এর মধ্যে সুনামগঞ্জ জেলায় ৯৫টি হাওর রয়েছে। এসকল হাওর নিয়ে মাস্টারপ্লান গ্রহণ করেছে সরকার। বাপাউবো জেলার ৩৭টি হাওরসহ অন্যান্য হাওর উপ-প্রকল্পের ডুবন্ত বাঁধের ভাঙ্গন বন্ধকরণ ও মেরামত কাজ বাস্তবায়ন চলমান রয়েছে। হাওরে মৎস চাষ,নৌচলাচল ও বন্যার প্রকোপ কমানোর লক্ষ্যেই পরিকল্পনা অনুযায়ী এসব ডুবন্ত বাঁধ নির্মান করা হয়। বর্ষায় এবং বর্ষা শেষে প্রতিবছর ডুবন্ত বাঁধ বিভিন্ন মাত্রায় ক্ষতিগ্রস্থ হয়। স্বাভাবিক নিয়মে প্রতিবছর বাঁধের ক্ষতিগ্রস্থ অংশগুলো মেরামত এবং পরবর্তীতে ফসল রক্ষার পদক্ষেপ নেওয়া হয়।
কাবিটার আওতায় হাওর এলাকায় বাপাউবো ক্ষতিগ্রস্থ বাঁধ মেরামত,নদী/খাল পুন:খনন কাজে ২০২০-২০২১ অর্থবছরে ১০৯০৮.৬৮ লাখ টাকা ব্যয়ে ৬১৯.৫৪৭ কি: মি: বাঁধ ভাঙ্গন বন্ধকরন ও মেরামত কাজ করা হয়েছে। কাবিটা স্কীম প্রণয়ন ও বাস্তবায়ন সংক্রান্ত জেলা কমিটি ৫৩২.৩৯৩ কি:মি: দৈর্ঘে ৭২৪ টি স্কীম অনুমোদিত হয়। যার প্রাক্কলিত মূল্য ১১৯৮৪.৫৬ লাখ টাকা, বরাদ্দ দেয়া হয়েছে ৬৬৬৩.৬৭লাখ টাকা। ৭২৪ টি পিআইসির আওতায় ক্ষতিগ্রস্থ বাঁধ মেরামত এবং ১৩০টি ক্লোজার নির্মাণ কাজ চলমান রয়েছে। মোট কাজের অগ্রগতি ৬৩.২৬ শতাংশ। অগ্রগতি সন্তোষজনক।
পরিদর্শনকালে সংরক্ষীত আসনের মহিলা সংসদ সদস্য শামীমা আক্তার খানম, মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব(উন্নয়ন) মিজানুর রহমান, উন্নয়ন বোর্ডের মহাপরিচালক ফজলুর রশিদ, জেলা প্রশাসক সুনামগঞ্জ মোঃ জাহাঙ্গীর হোসেন, অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী (পুর),উত্তর-পূর্বাঞ্চল, সিলেট, এস, এম, শহিদুল ইসলাম ,পানি উন্নয়ন বোর্ড সুনামগঞ্জ এর উব্ধর্তন কর্মকর্তাবৃন্দ।